বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ভিতরে ক্যাপাসিটর কেন ব্যবহার করা হয়? এটি ব্যবহার না করলে, কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে?
- পরিবাহী কী?
- অন্তরক কী?
- পরাবৈদ্যুতিক কী?
- তড়িৎ মেরুকরণ কী?
- ক্যাপাসিটর কী? ধারকের সমবায় গুলি কী কী?
- ক্যাপাসিটর কিভাবে কাজ করে?
- ক্যাপাসিটর এর ব্যবহার।
১. পরিবাহী: কিছু কিছু কঠিন পদার্থের পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন গুলি আলগাভাবে অবস্থিত থাকে এবং এই ইলেকট্রনগুলি তড়িৎ পরিবহনের জন্য দায়ী। যে সমস্ত পদার্থের মধ্যে এই পরিবহন ইলেকট্রনগুলি পাওয়া যায় তাদের পরিবাহী (conductors) বলে।
২. অন্তরক (insulators): যে সমস্ত পদার্থে পরিবহক ইলেকট্রনগুলি র নড়াচড়ার স্বাধীনতা খুবই সীমিত তারা অন্তরক রূপে পরিচিত।
৩. পরাবৈদ্যুতিক (Dielectric): পরাবৈদ্যুতিক বলতে বোঝায় একটি মাধ্যম, যা ধারকের পাত দুটির মধ্যে ভর্তি করলে, ধারকের ধারকত্ব বৃদ্ধি পায়।কিছু অন্তর যেমন- কাচ, প্যারাফিন, অভ্র ইত্যাদি ধারকের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বায়ুর পরিবর্তে ব্যবহার করলে ধারক টির ধারকত্ব প্রচুর বৃদ্ধি পায়।
৪. তড়িৎ মেরুকরণ (Electric Polarisation): ধরা যাক, এক টুকরো আইসোট্রপিক এবং পরাবিদ্যুৎ -যার মধ্যে একটি পরমাণুর ইলেকট্রনগুলির ভরকেন্দ্র প্রোটনগুলির ভরকেন্দ্রের সঙ্গে সমপতিত থাকে।তড়িৎক্ষেত্র প্রয়োগ করলে প্রোটনগুলি তড়িৎক্ষেত্রের অভিমুখে অগ্রসর হয় এবং ইলেকট্রনগুলি তড়িৎক্ষেত্রের বিপরীত অভিমুখে অগ্রসর হয়।এই ক্ষেত্রে পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যমের প্রতিটি অণু তড়িৎদ্বিমেরু হয়ে পড়ে এবং যে অবস্থা সৃষ্টি হয়, তাকে তড়িৎ মেরুকরণ বলে।
৫. ধারক (Capacitors): এটি হলো পরিবাহীর ব্যবস্থাপনা (সজ্জা), যাতে পরিবাহীর ধারকত্ব কৃত্রিমভবে বাড়ানো যায়। বাস্তবে এতে দুটি পরিবাহী থাকে, যার মধ্যে একটি অন্তরিত এবং অপরটি ভু সংযুক্ত থাকে।
ধারকের সমবায় (Combination of Capacitors):
(i) শ্রেণী সমবায় (Series combination): ধরা যাক, V = বিভব-প্রভেদ; Q = মোটা আধান; C = তুল্য ধারকত্ব; C₁ = প্রথম ধারক যার বিভব প্রভেদ V₁; C₂ = দ্বিতীয় ধারক যার বিভব প্রভেদ V₂; C₃ = তৃতীয় ধারক যার বিভব প্রভেদ V₃.যেখানে মোট বিভব পার্থক্য, V = V₁ + V₂ + V₃অতএব, Q/C = V₁ + V₂ + V₃বা, Q/C = Q/C₁ + Q/C₂ + Q/C₃অতএব, 1/C = 1/C₁ + 1/C₂ + 1/C₃এটি থেকে শ্রেণী সমবায় তুল্য ধারকত্ব C পাওয়া যায়।
(ii) সমান্তরাল সমবায় (Parallel combination): ধরা যাক, Q = মোট আধান; Q₁ = প্রথম আধান; Q₂ = দ্বিতীয় আধান; Q₃ = তৃতীয় আধান; V = বিভব প্রভেদ; C = তুল্য ধারকত্ব; C₁ = প্রথম ধারক; C₂ = দ্বিতীয় ধারক; C₃ = তৃতীয় ধারক.
এখানে মোট আধান,Q = Q₁ + Q₂ + Q₃ এবং Q = VC = VC₁ + VC₂ + VC₃
অতএব, C = C₁ + C₂ + C₃ এটি সমান্তরাল সমবায় এর তুল্য ধারকত্বের সমীকরণ।
৬.ক্যাপাসিটর কিভাবে কাজ করে: ক্যাপাসিটর বা ধারক একটি জলের ট্রাংক এর মত কাজ করে। গঠন: ক্যাপাসিটর পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যম দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে এবং এই মাধ্যমের মধ্যে দুটি ধাতব পাত থাকে। ক্যাপাসিটরে তড়িৎ সংযুক্ত করলে পাত দ্বয় এর মধ্যে তড়িৎ মেরুকরণের সৃষ্টি হয় এবং ক্যাপাসিটরটি আহিত হয়ে তড়িৎকোষের(ব্যাটারি) মত আচরণ করে। এই অবস্থায় তড়িৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে ক্যাপাসিটর ব্যাটারির ন্যায় আচরণ করে।৭. ক্যাপাসিটর এর ব্যবহার: ক্যাপাসিটর সেখানে ব্যবহৃত হয় যেখানে তড়িৎ এর অ্যাকুরেসি থাকে অর্থাৎ তড়িৎ বিচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হয়। যেমন ধরুন, পরিবর্তী প্রবাহ (alternative current) – তে তড়িৎ বিচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হয়।প্রশ্ন অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ভিতরে ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয় কারণ তড়িতের বিচ্ছিন্ন প্রবাহকে নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহতে রূপান্তরের জন্য।এটি (ক্যাপাসিটর) ব্যবহার না করলে, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করতো।
একটা উদাহরণ দিয়ে এটা বুঝা যাক,
তার আগে আমাদের জানতে হবে,
পারস্পরিক আবেশাঙ্ক(coefficient of mutual induction): মুখ্য কুন্ডলীতে একক তড়িৎ প্রবাহ পরিবর্তনের জন্য গৌণ কুন্ডলীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক বলের মান কে পারস্পরিক আবেশাঙ্ক বলে।
ট্রান্সফরমার: ট্রান্সফর্মার হল একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র যা পারস্পারিক আবেশাঙ্ক এর উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে।ট্রান্সফর্মার এর কাজের উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা-
(i)অবরোহী (step down): এটি উচ্চ ভোল্টেজ কে নিম্ন ভোল্টেজে রূপান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়। মুখ্য কুণ্ডলী > গৌণ কুন্ডলী। উদাহরণ- মোবাইলের চার্জারের ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়।ও
(ii)আরোহী (step up): এটি নিম্ন ভোল্টেজ কে উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়। মুখ্য কুণ্ডলী < গৌণ কুন্ডলী।
উদাহরণ-স্টেবিলাইজার এই ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়।
ডায়োড:
N-TYPE DOPING: অনেকগুলো সিলিকন (Si) পরমাণুর মধ্যে কিছু পরিমাণ পোলোনিয়াম (Po) পরমাণু নির্দিষ্ট অনুপাতে ঢুকানো হয়। এর ফলে এই যৌগে একটি করে মুক্ত ইলেকট্রন সৃষ্টি হয়।
P-TYPE DOPING: অনেকগুলো সিলিকন (Si) পরমাণুর মধ্যে কিছু পরিমাণ বোরন (Bo) পরমাণু নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রন করা হয়। এর ফলে এই যৌগটিতে একটি করে ইলেকট্রন হোল (ইলেকট্রনের ঘাটতি) দেখা যায়।
এই N জংশন এ ধন্যাত্মক ও P জংশন এ ঋণাত্বক তড়িৎ প্রবাহ দিলে।N- junction এ থাকা মুক্ত ইলেকট্রনটি P- junction এর ইলেকট্রনের ঘাটতি পূরণ করে N junction থেকে P junction এর দিকে তড়িৎ প্রবাহ হয়।এখন N জাংশন ও P জংশন এরমধ্যে সংযুক্ত তড়িৎ উৎসটির মেরু পরিবর্তন করলে অর্থাৎ N junction এ ধন্যাত্মক না দিয়ে ঋণাত্বক দিলে এবং P junction এ ঋণাত্বক না দিয়ে ধনাত্মক দিলে। N ও P junction এর মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ হবে না।উপরন্তু পরীক্ষা থেকে আমরা ডায়োড এর বৈশিষ্ট্য ও কার্যনীতি জানতে পারলাম যে, ডায়োড এর মধ্য দিয়ে কেবল একমুখী তড়িৎ পরিবহন।ডায়োডের ধনাত্মক দিক সরলরেখা (“।”) দ্বারা এবং ঋণাত্বক দিক ত্রিভুজ[“∆”] দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।পরিবর্তী প্রবাহ ব্যবহারের কারণ: এই প্রবাহ তড়িৎ শক্তি কম অপচয় হয় (তড়িৎ শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তর কম হয় ফলে শক্তির অপচয় কম হয়) তাই বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চালানোর কাজে AC Current ব্যবহার করা হয়।AC Current 50Hz এর অর্থ: প্রবাহটি 1 সেকেন্ডে 50 বার ধনাত্মক (+) হয় ও 1 সেকেন্ডে 50 বার ঋণাত্বক(- ) হয়।এখন ধরুন, একটি অবরোহী ট্রান্সফর্মার (step down) AC Current (240V,50Hz) এ যুক্ত করা হল। এই অবস্থায় ট্রান্সফর্মার থেকে সেকেন্ডে 50 বার ধনাত্মক ও 50 বার ঋণাত্বক current নির্গত হওয়া ফলে বিচ্ছিন্ন AC কারেন্ট তৈরি হয়। এই বিচ্ছিন্ন AC কারেন্ট কে DC তে পরিবর্তনের জন্য ডায়োড ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ ডায়োডের মধ্য দিয়ে নির্গত বিচ্ছিন্ন DC Current ব্যবহারের অযোগ্য কারণ এই বিচ্ছিন্ন কারেন্টে কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্র সঠিকভাবে কার্য করতে পারে না। তাই ডায়োড থেকে নির্গত বিছিন্ন প্রবাহকে নিরবচ্ছিন্ন DC তে পরিবর্তনের জন্য Capacitors ব্যবহৃত হয়।
Recent Comments